১৫ দিনের ঈদযাত্রায় ২৯৪ প্রাণের মৃত্যুমিছিল : সেভ দ্য রোড
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদের ১৫ দিনে প্রতিদিন সড়কে ঝরেছে ১৯ প্রাণ। আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার লক্ষ্যে সচেতনতা-গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা আরো জানান, এবার ঈদযাত্রা অনেকটাই মরণযাত্রা হয়ে এসেছিলো আমাদের জীবনে। শুধু সড়কেই নিয়ম না মেনে অতিদ্রুত বাহন চালানো, পুলিশ-প্রশাসনের ঢিলেঢালা তদারকি আর যাত্রীদের অসচেতনতার কারণে ৫ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৮ টি ছোট-বড় দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৮২৭ এবং নিহত হয়েছেন ২৯৪ জন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রাক-বাস-পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এসব দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষ করে এবার ১৫ দিনে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে বাস-এ। ফিটনেসবিহীন ও অদক্ষ চালকের নিয়ম না মেনে ড্রাইভিং-এ সারাদেশে ৫৩২ টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৮৫ এবং নিহত হয়েছেন ১২৫ জন। ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৮৮ টি, আহত ৩৪৯ এবং নিহত হয়েছেন ৫৭ জন। নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও হাইওয়েতে থ্রী হুইলারসহ অন্যান্য বাহন চলার পাশাপাশি দ্রুতগতিতে পিকআপ চলায় ৪১৭ টি দুর্ঘটনায় আহত ৫০৩ এবং নিহত হয়েছেন ৮৪ জন। সেভ দ্য রোড-এর বিশেষ দাবি বাইক লেন না বাস্তবায়ন না হওয়া এবং সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতার কারণে ২৫১ টি বাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৯০ এবং নিহত হয়েছেন ২৮ জন। সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী ও ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়-এর তত্বাবধানে দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক দেশ রূপান্তর, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক কালবেলাসহ ২২ টি জাতীয় দৈনিক, আরটিভি, জিটিভি, যমুনা নিউজ, মাসরাঙ্গা, এটিএন বাংলাসহ ২০ টিভি-চ্যানেল, জাগো নিউজ, বাংলা নিউজ, বিডিনিউজসহ আঞ্চলিক ও স্থানিয় ৮৮ টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানিয় প্রত্যক্ষদর্শী-সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবিগণের দেয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়- এবার সড়কে হাইওয়ে পুলিশের ড্রোন এবং স্পিডগানের ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুৃল হওয়ায় দুর্ঘটনারোধে তেমন কোন ভূমিকাই রাখতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সেতু-সড়ক ও মহাসড়কে বিলম্বিত টোল প্লাজা ও চেক পোস্টগুলো বাড়তি দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়- সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- চরম সতর্কতার কথা বললেও এবার বিভিন্ন স্থানে পরিবহন ভাড়া ২-৩ গুন বেশি আদায় করার কারণে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির কবলে পরলেও বিআরটিএ বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মনিটরিং ব্যবস্থা কাজে আসেনি। বগুড়া, বরিশাল, নওগাঁ, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের অধিকাংশ সড়ক পরিবহন মালিক-কর্তৃপক্ষই ভাড়া নৈরাজ্য করে যাত্রীদেরকে চরম ভোগান্তির শিকার করেছে।
অন্যদিকে ৫ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল ১৫ দিনে- রেলপথ : ‘টিকেট যার, ভ্রমণ তার’ শ্লোগান ব্যবহার করলেও যাত্রী ভোগান্তি কমেনি। বরং দুর্নীতির মাধ্যমে নগদ টাকায় ভ্রমণ করতে গিয়ে যাত্রী ভোগান্তির মাত্রা ছিলো অন্যান্য বছরের তুলনায় ১০০% বেশি। সেই সাথে ট্রেনের ছাদ থেকে পরে ১১ জনের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নৌপথে : ১৭ টি দুর্ঘটনায় ১০ নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছে। আকাশপথ : কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও যথারীতি যাত্রী বিড়ম্বনা ছিলো অন্যান্য বছরের তুলনায় ৭০% বেশি।
এবার ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে সেভ দ্য রোড ৪ টি কারণ চিহ্নিত করেছে- ১. স্পিডগান, সিসি ক্যামেরা ও রোড ডিভাইডারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। ২. নির্ধারিত গতিসীমা না মানলেও বিচারের আওতায় না আনা ৩. হাইওয়েতে থ্রী হুইলার চলার পাশাপাশি কুমিল্লা, ফেনী, বগুড়া, বরিশালসহ বিভিন্ন রুটে ‘ঝাপখোলা’ বিশেষ ধরণের মাইক্রোবাস চলায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। ৪. সর্বোপরী ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে অযাচিত চাঁদা আদায় এবার দুর্ঘটনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এমতবস্থায় সেভ দ্য রোড বরাবরের মত আইনের প্রয়োগ ও পদক্ষেপে সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনামুক্ত পথ চলাচলের অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগনের সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে সেভ দ্য রোড। একই সাথে সেভ দ্য রোড আগামী ঈদ উল আজহার আগে তাদের ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানায়। ৭ দফা হলো- ১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। ২. ৩ কিলোমিটার অন্তর কার্যকর সিসি ক্যামেরা ও পুলিশবুথ স্থাপনের পাশাপাশি সারাদেশে সকল ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারিভাবে দিতে হবে। ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। ৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতু সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।
উল্লেখ্য, ‘সেভ দ্য রোড-এর অঙ্গীকার পথ দূর্ঘটনা থাকবে না আর’ বাক্যটিকে লালন রেখে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ২০০৭ সালে পথচলা শুরু করে আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য নিবেদিত দেশের একমাত্র সচেতনতা-গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড।