ঢাকা | ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ - ১১:৪৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

১৪৪ ধারায় বাগেরহাটের কচুয়ায় সমাবেশ করল বিএনপি, সাবেক এমপির অনুষ্ঠান স্থগিত

  • দৈনিক নবিন আলো প্রতিদিন
  • আপডেট: Tuesday, December 17, 2024 - 12:53 pm
  • Shobhan Hossain
  • পঠিত হয়েছে: 10 বার

এস এম রাজ,বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকায় একই সময়ে বিএনপি ও তাদের দলের সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) অনুষ্ঠান কেন্দ্র ১৪৪ ধারা জারিকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জনসভা হবে এবং সাবেক এমপি’র সংবর্ধনা অনুষ্ঠান স্থাগিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সেখানে সংঘাত এড়াতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েত করে প্রশাসন। উপজেলা বিএনপি মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব নির্ধারিত রশিক লাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জনসভা করতে পারেনি। তারা বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় জনসভা না করে সমাবেশ করেছে। তবে সমাবেশে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকায় একই সময়ে কচুয়া উপজেলা বিএনপি ও তাদের দলের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবং চারপাশের ১ কিলোমিটারের মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকল ধরণের জনসমাগম, সভা সমাবেশ করা, আগ্নেয়ান্ত্র বহন নিষিদ্ধসহ ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করেউপজেলা প্রশাসন। সব ধরনের সংঘাত এড়াতে ওই এলাকায় আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ১৪৪ ধারা জারি করা এক কিলোমিটারের মধ্যে কাউকে কোন কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হয়নি। তবে উপজেলা বিএনপি ১৪৪ ধারা জারি করা এলাকা থেকে সরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকার মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ও বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিমকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর মাঝেই পার্শ্ববর্তী গোয়ালমাঠ রশিক লাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই সময়ে কচুয়া উপজেলা বিএনপি জনসভার আয়োজন করে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে সোমবার রাতে সংঘাত এড়াতে ওই দুই অনুষ্ঠান স্থলসহ চারপাশে ১ কিলোমিটার এলাকায় সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। এরপর মঙ্গলবার সকালে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার চেয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায় জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। সেখানে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসানের কক্ষে প্রবেশের পর বিএনপি নেতাদের কয়েকজনকে বেশ উচ্চস্বরে কথা বলতে বাইরে থেকে শোনা যায় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপির কর্মী। এ সময় ওই কক্ষের বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের অনেকে জানালার কাছে গিয়ে ভেতরে কী কথা হচ্ছে তা শুনতে চেষ্টা করতে দেখা যায়। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা সভাস্থল কচুয়ার গোলামাঠ স্কুল মাঠে যান। সেখান থেকে ফিরে বেলা পৌনে ১টার দিকে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে জরুরী সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। এতে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির সমালোচনা করে জেলা বিএনপির আহবায়ক টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, আমরা জানার পর থেকে রাতে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তুরতার সাথে আমরা কেউ সংযোগ স্থাপন করতে পারিনি। তাই সকালে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ছিলাম। সেখানে আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী যুক্তি দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি, যে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। সেখানে ১৪৪ ধারা জারির জন্য যে কথা বলা হয়েছে তার কোন ভিত্তি আমরা খুঁজে পাইনি। আমাদের জনসভার মধ্যমণি ছিল দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সাঙ্গে একই মামলায় মিথ্যা অভিযোগে দীর্ঘ ৭ বছর কারাগাভোগ করা বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম খান। সেখানে সাবেক এমপি (সেলিম) তিনি আমাদের দলের কেউ না। তারা আমাদের সমাবেশ তারা বন্ধ করতে পারেন না। এম এ এইচ সেলিম এমপি হতে দলে এসেছিলেন এবং তা হওয়ার পর তিনি আবার পদত্যাগ করে চলে যান উল্লেখ করে আকরাম হোসেন বলেন, ২০০৯ সালে তিনি দল ছেড়ে চলে যান। এমন যারা সময় সময় আসেন তারা দলে স্থান পাবেন না। ১৪৪ ধারা জারি থাকার পরও সভা করাটা আইনের লক্সঘন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশে লোক আসবে। আমরা আইন ভঙ্গ করবো না। যেহেতু সবাই আসবে প্রয়োজনে আমরা সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে পাশের কোন স্থানে গিয়ে সভা করবো, তেমন প্রস্তুতি আছে।’ সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এমপি সেলিমের ভাই ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য শাহেদ আলী ররি, সৈয়দ নাসির আহম্মেদ মালেক, সমশের আলী মোহনসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, আরেক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এ এইচ সেলিম লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, যেহেতু প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে তাই আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমার কলেজ কর্তৃপ¶কে সংবর্ধনা অনুষ্ঠনা স্থগিত করতে বলেছি। ওই অনুষ্ঠান আপাতত হচ্ছেনা। এ সময় তিনি বিএনপিতে ছিলেন এবং বিএনপিতে আছেন উল্লেখ করে বলেন, আমি পরিস্থিতির কারণে কেবল দলের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। তা না হলে হয়তো আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হত। আমি বিএনপির সদস্য পদ থেকে তো পদত্যাগ করিনি। দল ও কর্মীদের রক্ষার স্বার্থেই এতদিন রাজনীতি থেকে তিনি দূরে ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, আমি এখনও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে রয়েছি। আমার সদস্য পদ কেউ কেড়ে নিতে পরেনা। আমি বেগম খালেদা জিয়ার কাজ থেকে সদস্য পদ নিয়েছি। এখানে বিএনপির একটি গ্রুপ আমার জনপ্রিয়তার ইর্ষাণিত হয়ে এসব ষড়যন্ত্র করছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রহমান টুটুল, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ফকির তারিকুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহবুবুর হক কিশোর, জেলা বিএনপির সদস্য এ্যাড. আসাদুজ্জামান, সেলিমের বড় ছেলে মেহেদী হাসান প্রিন্সসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।