ঢাকা | জানুয়ারী ১৩, ২০২৫ - ১০:৪৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

আওয়ামীলীগের রোষানলে বন্ধ হওয়া ১৭ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালুর দাবি কর্মহীন শ্রমিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

  • দৈনিক নবিন আলো প্রতিদিন
  • আপডেট: Friday, January 10, 2025 - 12:36 pm
  • Shobhan Hossain
  • পঠিত হয়েছে: 3 বার

আসাদুজ্জামান শেখ,নিজস্ব প্রতিবেদক
চিংড়ী প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাটকল, প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং, সিরামিকসহ ইত্যাদি পণ্য রফতানিকারক ১৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছে লখপুর গ্রুপের কর্মহীন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। শুক্রবার সকালে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী মোড়স্থ গ্রুপটির বন্ধ কারখানার সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন কয়েক হাজার শ্রমিক। এসময়ে তারা খুলনা-মংলা মহাসড়কে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। তাদের দাবি, আওয়ামী দুঃশাসন, চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব ও রোষানলে পড়ে গ্রুপটির ব্যবসায়িক নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লখপুর গ্রুপভুক্ত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব মিথ্যা অভিযোগে আদালতে ভুল তথ্য দিয়ে ফ্রিজ করা হয়েছে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রুপে কর্মরত প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছে।আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ী রফতানির অন্যতম প্রতিকৃৎ লখপুর গ্রুপ। গ্রুপটির মাধ্যমে অদ্যবদি ১২ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। গ্যাসের সুবিধা না থাকা স্বত্ব্ওে কোম্পানির সব কারখানা বাগেরহাটের ফকিরহাটের কাটাখালী এলাকাকেন্দ্রীক। কারখানায় কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রায় শতভাগ বৃহত্তর খুলনা বাগেরহাটের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর। এদাঞ্চলে তেমন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি, তাই কর্মসংস্থানের তীব্র অভাব রয়েছে। এতো অবদান রাখার পরও শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে সব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রত্যেকের পরিবারে সীমাহীন কষ্ট নেমে এসেছে। তারা জানিয়েছে, লখপুর গ্রুপ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক গ্রুপের লখপুর ফিস প্রসেসিং লিঃ ১৯৯০-’৯১, ১৯৯৫-’৯৬, ১৯৯৬-’৯৭ এবং ১৯৯৭-’৯৮ সালে গোল্ড ট্রফি এবং ১৯৯৩-’৯৪ সালে সিলভার ট্রফি অর্জন করে, রূপসা ফিস এন্ড এ্যালাইড ইন্ডাঃ লিঃ ২০০৩-’০৪, ২০০৫-’০৬ ও ২০১০ সালে রপ্তানীতে গোল্ড ট্রফি, বাগেরহাট সি ফুডস্ ইন্ডাঃ লিঃ ২০১৫ সালে রপ্তানীতে গোল্ড ট্রফি এবং ২০১০ ও ২০০৯ সালে রপ্তানীতে সিলভার ট্রফি অর্জন করে, সাউদার্ন ফুডস্ লিঃ রপ্তানীতে ১৯৯৯-২০০০ সালে রপ্তানীতে সিলভার ট্রফি এবং ১৯৯৬-’৯৭ ও ২০০০-’০১ সালে রপ্তানীতে ব্রোঞ্জ ট্রফি অর্জন করে এবং সম্পা আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেস লিঃ ২০১৬ সালে রপ্তানীতে গোল্ড ট্রফি অর্জন করে। এছাড়া দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় গ্রুপটির কর্ণধার চারবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সিআইপি মনোনীত হন। এ প্রসঙ্গে লখপুর গ্রুপের কর্ণধার এস এম আমজাদ হোসেন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল পরিমাণে চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে, সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমি ১৯৮৫ সাল থেকে হিমায়িত চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু করি। এরপর রফতানিকারক আরও কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজটি অধিকাংশ নারী শ্রমিকেরা সম্পাদনকরে থাকে। আমরা ব্যাপক সাফল্যও পাই। রফতানিতে অবদান রাখায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। কিন্তু ২০১২ সালের দিকে খুলনা ও বাগেরহাটের আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের বিশেষ করে ক্ষমতাসীন শেখ পরিবার ও তাদের মদদপুষ্ট ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাসের সীমাহীন চাঁদাবাজি ও অত্যাচারের কারণে লকপুর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিল না। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় নিয়ন্ত্রনসহ আধিপত্য তৈরী করে ব্যবসায় গুলো তাদের নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী শতভাগ রপ্তানীমুখী এসব প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা যেমন কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ, দুদক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নানা রকম হয়রানি ও মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান গুলোকে একেএকে ধ্বংস করে দেয়। আমজাদ হোসেন আরও জানান, ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের ওই চক্রটি চলমান একটি ঋণের বিপরীতে আমার সমস্ত সম্পদ দখল করতে আদালতে বানোয়াট মামলা দায়ের করে। এমনকি একটি গোয়েন্দাসংস্থা আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশ ছাড়াও করে। কিন্তু আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে সকল মামলা লড়াই করছি। দুদকে যেসব ঋণহিসাব নিয়ে মিথ্যা মামলা করেছিল, তা সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিয়েছি। এখন আমার ব্যাংক হিসাব এবং ব্যবসায়িক নিবন্ধন খুলে দিলে ব্যবসা করতে পারবো। তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামীলীগের দুর্বৃত্তায়নের হোতা স্বপন দাস তার তিল তিল করে পড়া রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাগুলো ব্যবহার করে বন্ধ করে দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ যা একটি পাবলিক লিমিেিটড কোম্পানী এবং ঢাকা স্টক একচেঞ্জ লিঃ ও চিটাগং স্টক একচেঞ্জ লিঃ এ তালিকাভূক্ত। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২৫০০ কোটিরও বেশি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করেছে। কিন্তু ২০১৬ সালে এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশতঃ একটি বিশেষ পরিবারের নির্দেশে মোংলা কাস্টমস্ হাউজ কর্তৃক মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা (আদেশ নং-এস/০৫ তাং- ২৬/০৮/২০১৫) দায়ের করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। এমনিভাবে অত্র গ্রুপের আরেকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টাঃ লিঃ, যা বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দেশের জন্য প্রায় ১৫০০ কোটিরও বেশি টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করেছে কিন্তু দুঃখজনক ভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের স্বীকার হয় এবং এটির নামেও মোংলা কাস্টমস্ হাউজ কর্তৃক মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা (আদেশ নং-০১ তাং- ২৫/০১/২০২১) দায়ের করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। এভাবে একে একে অত্র শিল্প গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহও মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে বন্ধ করে দেয়। মুনস্টার পলিমার এক্সপোর্ট লিঃ বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রপ্তানীর পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। আরেকটি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন পলিমার লিঃ বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১২০০ কোটিরও বেশি টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা দেশের জন্য আয় করে। কিন্তু এগুলোও ঐ বিশেষ রাজনৈতিক পরিবারের নির্দেশে মোংলা কাস্টমস্ হাউজ কর্তৃক মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে যথাক্রমে আদেশ নং-০৮/২০২১ তাং-২৮/০১/২০২১ এবং আদেশ নং-০৯/২০২১ তাং-২৮/০১/২০২১, আদেশ নং-১০/২০২১ তাং-১১/০২/২০২১ এর মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ঐ এলাকায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়ে।