রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনায় এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় কোথাও পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের দেখা যায়নি। সড়কে বিক্ষোভকারীদের অবস্থানের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে যেতে পারেনি।এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা ও নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন- জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, কেসিসির কাউন্সিলর কণিকা সাহা, আওয়ামী লীগ নেতা বিজন, ছাত্রলীগ নেতা জনি বসুসহ অন্তত ৫০ জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুরে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে নগরীর শেরে বাংলা রোডের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ভাই সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের বাড়ির সামনে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় ওই বাড়ির সামনে কোনো পুলিশ বা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছিলেন না। একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলাকারীরা ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই সব পুড়ে যায়।
বিকেল পৌনে ৩টার দিকে আগুন নিভে গেলে পুলিশ ও এপিবিএন -এর সদস্যরা ওই বাড়িতে যান। পরে যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাড়ির সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়। তারা চলে গেলে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সংসদ সদস্যের বাড়িতে আরেক দফায় হামলা হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর লোয়ার যশোর রোড ও পিকচার প্যালেস মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আন্দোলনকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল থেকে লোয়ার যশোর রোডের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিছু আন্দোলনকারী পিকচার প্যালেস মোড় থেকে সেদিকে যেতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। এসময় দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাঝে ককটেল ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটে। পরে বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বরে থাকা ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেল ও গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড় ও আহসান আহমেদ রোডে অন্তত ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে।
আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের পর তারা অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের ভবনে ভাঙচুর চালায়। পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ নগর ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ভবনের কিছু কাচ ভেঙে যায়। তারা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে প্রবেশ করে সামনে থাকা ৪টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল যমুনা টিভির খুলনা প্রতিনিধি প্রবীর বিশ্বাসের।
খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, তার বাড়িতে ২ দফায় হামলা হয়েছে এবং সংসদ সদস্য শেখ হেলালের বাড়িতে ২ দফায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা।
এদিকে আন্দোলনকারীরা নগরীর পিটিআই মোড়ে ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল আহসান টিটোর কার্যালয়, রয়্যাল মোড়ে ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল ইসলাম টিটোর ব্যক্তিগত কার্যালয়, গল্লামারী এলাকায় যুবলীগ নেতা শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শেরেবাংলা সড়কে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন হোটেল গ্র্যান্ড প্লাসিড ও ফারাজীপাড়া এলাকায় মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশের বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া শেখপাড়া এলাকায় ২০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
আন্দোলনকারীদের হামলায় এসএ টিভির রকিবুল ইসলাম মতি, মাছরাঙা টেলিভিশনের মোস্তফা জামাল পপলুসহ ৩ জন সাংবাদিক আহত হন।
দুপুরে আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ব্যক্তিগত কার্যালয়, খুলনা ক্লাব, অফিসার্স ক্লাবে ভাঙচুর করে। তারা সংসদ সদস্যের অফিসের নিচে থাকা ৩টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। নগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউতে বাংলালিংক অফিসের সামনে ৪টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিকেলে নগরীর খালিশপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের বাড়ি, খালিশপুর থানা বিএনপি ও ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।